![](https://dailykolomkotha.com/wp-content/uploads/2022/01/sinha-samakal-61f75f099362f.jpg)
ছবি সংগৃহীত
ছবি সংগৃহীত
কক্সবাজারে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলার রায় ঘোষণা সোমবার (৩১ জানুয়ারি) সকালে হওয়ার কথা ছিল। পিছিয়েছে কিন্তু সেই সময় পিছিয়ে দুপুরে ঘোষণা করা হবে বলে জানা গেছে। কক্সবাজার জেলা আদালতের ইন্সপেক্টর চন্দন কুমার দাশ জানান, আসামিদের দুপুর ২টার দিকে আদালতে হাজির করা হবে। রায়কে ঘিরে কক্সবাজার জেলা আদালতপাড়ায় কঠোর নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। এ বিষয়ে কক্সবাজার সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-অপারেশন) সেলিম উদ্দিন জানান, আদালতের ফটকসহ সবদিকে চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পুলিশ ও তিনটি সংস্থার সমন্বয়ে এ নিরাপত্তা ব্যবস্থা হয়েছে।
সিনহা হত্যা মামলায় অভিযুক্ত যারা
অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলায় নয় পুলিশ, তিন এপিবিএন পুলিশ সদস্য ও তিন জন স্থানীয় বাসিন্দাসহ ১৫ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। মামলায় অভিযুক্তরা হলেন- টেকনাফ থানার বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের তৎকালীন ও বরখাস্ত পরিদর্শক লিয়াকত আলী, প্রদীপের দেহরক্ষী রুবেল শর্মা, বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের বরখাস্ত উপপরিদর্শক (এসআই) নন্দদুলাল রক্ষিত, বরখাস্ত কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন ও আব্দুল্লাহ আল মামুন, বরখাস্ত সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) লিটন মিয়া, বরখাস্ত কনস্টেবল সাগর দেব, বরখাস্ত এপিবিএনের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. শাহজাহান, বরখাস্ত কনস্টেবল মো. রাজীব ও মো. আবদুল্লাহ, টেকনাফ থানায় পুলিশের দায়ের করা মামলার সাক্ষী বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরের মারিশবুনিয়া গ্রামের নুরুল আমিন, মো. নেজামুদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।
অভিযুক্ত আসামিদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ আনা হয়েছে। মামলার তদন্তকারী সংস্থা র্যাব আদালতে দেওয়া চার্জশিটে তাদের সবার বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে। বর্তমানে তারা কক্সবাজার কারাগারে।
সিনহা হত্যা মামলার চার্জশিটে যা আছে
চার্জশীটে উল্লেখ করা হয়, ২০২০ সালের ৩১ জুলাই বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে সিনহা মো. রাশেদ খান তার সঙ্গী সাহেদুল ইসলাম সিফাতকে নিয়ে প্রতিদিনের কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ভিডিও ধারণের জন্য টেকনাফ থানার মারিশ বুনিয়ার মুইন্ন্যা পাহাড়ের উদ্দেশে প্রাইভেটকারে রওনা হন। অভিযোগপত্রের ১৩ নম্বর পাতার তৃতীয় অনুচ্ছেদে বলা হয়, মেজর (অব.) সিনহার গাড়িটি রাত ৯টা ২০ মিনিটের দিকে বিজিবি চেকপোস্ট অতিক্রম করে। এরপর রাত ৯টা ২৫ মিনিটের দিকে গাড়িটি শামলাপুর চেকপোস্টে পৌঁছালে দায়িত্বরত এপিবিএন সদস্য রাজীব গাড়িটি থামান। তখন রাজীব পরিচয় জানতে চাইলে গাড়ির বাঁ-পাশের আসনে বসা সিফাত গাড়ির জানালা খুলে দেন।
এ সময় ড্রাইভিং সিটে বসা সিনহা মো. রাশেদ নিজের পরিচয় দেন। তাদের সঙ্গে কুশল বিনিময়ের পর রাজীব এবং অন্য দুজন সদস্য এসআই শাহজাহান আলী ও আবদুল্লাহ আল মামুন ওরফে ইমন স্যালুট দিয়ে গাড়িটিকে চলে যাওয়ার সংকেত দেন। মেজর সিনহা তখন গাড়িটি নিয়ে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করেন।
হঠাৎ মেজর সিনহা মো. রাশেদ খানের নাম শুনেই মো. লিয়াকত আলী চিৎকার করে গাড়িটির সামনে চলে আসেন এবং আবার তাদের পরিচয় জানতে চান। পুনরায় মেজর (অব.) সিনহা নিজের পরিচয় দেন। তখন লিয়াকত আলী উত্তেজিত হয়ে লাফ দিয়ে সামনে গিয়ে আবার ব্যারিকেড তুলে রাস্তা বন্ধ করে দেন।
অভিযোগপত্রের ১৪ পাতার প্রথম অনুচ্ছেদে হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিয়ে বলা হয়, ওই সময় লিয়াকত আলী উত্তেজিত হয়ে উচ্চস্বরে কথা বলছিলেন। তখন গাড়ির দুই নম্বর আসনে বসা সাহেদুল ইসলাম সিফাত দুই হাত উঁচু করে গাড়ি থেকে নামেন। ড্রাইভিং সিটে বসা মেজর সিনহাও দুই হাত উঁচু করে নেমে ইংরেজিতে ‘কাম ডাউন’, ‘কাম ডাউন’ বলেন এবং লিয়াকত আলীকে শান্ত করার চেষ্টা করেন।
লিয়াকত আলী মেজর সিনহার পরিচয় জেনে তার কোনো কথা না শুনে এবং তাকে কোনো সময় না দিয়ে তাকে লক্ষ্য করে প্রথমে দুই রাউন্ড গুলি করেন এবং কয়েক পা এগিয়ে গিয়ে আরও দুই রাউন্ড গুলি করেন। এতে মেজর সিনহা রাস্তায় পড়ে যান। গুলি করার পর লিয়াকত আলী মেজর সিনহা ও সিফাতকে হাতকড়া পরানোর নির্দেশ দেন। তখন এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিত আহত সিনহা মো রাশেদকে হাতকড়া পরান। কিন্তু, এসআই মো. শাহাজাহান আলীর কাছে হাতকড়া না থাকায় লিয়াকত তাকে গালমন্দ করেন এবং রশি এনে সিফাতকে বাঁধতে বলেন।
তখন কনস্টেবল আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ ওরফে ইমন পাশের শামলাপুর বাজারের দোকান থেকে রশি এনে এসআই শাহজাহান আলী, কনস্টেবল রাজিবের সহযোগিতায় সিফাতকে রশি দিয়ে বাঁধেন। ঘটনার পর লিয়াকত আলী মোবাইল ফোনে ওসি প্রদীপ কুমার দাশের সঙ্গে এক মিনিট ১৯ সেকেন্ড কথা বলেন এবং তিনি ওসি প্রদীপকে ঘটনাটি জানান। এর কিছুক্ষণ পর রাত ৯টা ৩৩ মিনিটে লিয়াকত আলী ঘটনাটি কক্সবাজারের পুলিশ সুপারকে (এসপি) জানান। সিনহা মো. রাশেদ তখনও জীবিত ও সজাগ ছিলেন এবং ব্যথায় কাতরাচ্ছিলেন। একপর্যায়ে মেজর সিনহা একটু পানি খাওয়ার জন্য কাকুতি-মিনতি করেন। এটা শুনে এবং তাকে তখনও জীবিত অবস্থায় দেখে লিয়াকত আলী আরও উত্তেজিত ওঠেন।
তিনি সিনহাকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘তোকে গুলি করেছি কি পানি খাওয়ানোর জন্য?’ এরপর লিয়াকত আহত সিনহার কাছে যান এবং তার বুকের বাঁ-পাশে জোরে কয়েকটি লাথি মারেন এবং পা দিয়ে বুক চেপে ধরেন। অভিযোগপত্রে বলা হয়, লিয়াকত আলীর সফলতার ফোন পেয়ে ওসি প্রদীপ একটি সাদা মাইক্রোবাস এবং একটি পিকআপ ভ্যানে তার ফোর্সসহ দ্রুতগতিতে রাত ১০টার দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছান। এরপর প্রদীপ ও লিয়াকত আলী একান্তে কিছু সময় আলাপ করেন। তারপর প্রদীপ গুলিবিদ্ধ হয়ে পড়ে থাকা মেজর সিনহার কাছে যান। তখন প্রদীপ দম্ভোক্তি করে বলেন, ‘অনেক টার্গেট নেওয়ার পর কুত্তার বাচ্চারে শেষ করতে পারছি।’
সিনহা হত্যার দিন মেরিন ড্রাইভে যা ঘটেছিল
২০২০ সালের জুলাই মাসে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান ‘জাস্ট গো’ নামে একটি ডকুমেন্টারি বানানোর জন্য কক্সবাজারের বিভিন্ন পর্যটন স্পট এবং মেরিন ড্রাইভ সড়কের পাশের পাহাড় ও সমুদ্রের প্রাকৃতিক দৃশ্যের ভিডিও ধারণ করতে এসেছিলেন। তার দুই সহযোগী সাহেদুল ইসলাম সিফাত এবং শিপ্রা দেবনাথ তার সঙ্গে ছিলেন।
টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের মারিশবুনিয়া এলাকার মুইন্যা পাহাড়ের ভিডিও চিত্র ধারণ শেষে মেরিন ড্রাইভ সড়ক দিয়ে কক্সবাজার ফিরছিলেন। ৩১ জুলাই রাত সাড়ে ৯টার দিকে শামলাপুর বাজারের কাছে এপিবিএন পুলিশ চেকপোস্টে বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকতের গুলিতে নিহত হন সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। এ সময় আটক করা হয়েছিল সাহেদুল ইসলাম সিফাতকে। তল্লাশি চালানো হয় সিনহার হোটেলে। ওই হোটেল থেকে আটক করা হয় অপর সহযোগী শিপ্রা দেবনাথকে। এরপর সারাদেশে শুরু হয় চাঞ্চল্যের।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।